Mukthir Kotha

I am much interested to do something in the cyber world regarding Bangabandhu but my knowledge capacity & capabilities of investments are too limited. In 1972 some how I have met our great leader and appealed for any kind of job when I was jobless. Bangabandhu rehabilitate me as a freedom fighter and that is my weak point of lives to remember him ever.

In the year of 1953 I came to this beautiful world while violent storm was shivering mother earth. In the month of April on the 13th which happened to be a Tuesday, I cried for the first time on my mothers’ lap and all my relatives rejoiced. It was an occasion of double happiness because my birth brought the long happy New Year along with it.This is Mukthi, Mukthishena71, somebody called me Mokter, someone mothul, but in 1971 I have changed my name when I have joined the Liberation war as a freedom fighter. The freedom fighter of Bangladesh liberation war called Mukthi bahini / Mukthifouze / Mukthishena, just I have found the new name so no one can call me others name which is not perfect and didn’t like. I became Mukthi, Moktel Hossain Mukthi.

I’m from South Akal Barish Village, Banshgadi Union under Kalkini UpaZila of Madaripur district. I have created arround 150 blogs/websites of Bangladesh Independec, glorious victory of bengali nation, father of nation bangabandhu, war crime of 1971, rape victims, freedom fighters, deshratna sheikh hasina alongwith our dedicated leaders of bangladesh awami league. I have modified 1000 of rare images of Bangabandhu and others those you may see on http://muktimusician.picturepush.com and google search easily.

Basically I have sung tagore songs in the media. Sometimes composing the music and lyricist I couldn’t anything in my life. Neither had I done anything for the people nor for my family due to my abnormality in 1975 august. Whereas, I got so many opportunity/ chances in my life that I couldn’t proper used for the people whom I loved so much. I loved father of nation Bangabandhu we couldn’t safe him & his family in 1975 being a freedom fighter that was one kind of burning fire on my heartiest chest of bottom.

I have cried a lot on the streets in 1975 for Bangabandhu even I was on the streets until midnight as a mad (I was in then PG Hospital under treatment of Dr. Hazera Mahtab (daughter of Late Dr. Ibrahim & wife of Dr. Fashiuddin Mahtab) three months. the Ministry of Land allowed my job without pay of there months salary due to my abnormality.

After liberation father of nation Bangabandhu & first Prime Minister of Bangladesh Late tajuddin Ahmed had given me a job in the ministry of land in 1972. I have worked with 11 Ministers & 9 full secretary including Abu Taher (Bangabandhu was selected him for Governor of Dhaka Division) M. Mokammel Huq, M. Keramat ALi, Golam Mostofa, jamsher Uddin Dr. Kamal Uddin Siddiqui, Md, Shahidul Alam and other so many. It is my great pleasure that I have worked with late abdur rob serniabat, Mollah Jalal, Sri Fonibhushon Majumdar, demoted Minister Mohamed Ullah (few days President of Bangladesh) I have beaten the police officer at Tejgaon Rail line in 1976 in absence of mind than finally central jail. The police beaten me whole night’s even put hot water to my face. Do you know why I have beaten that police officer? Yes, which I want to tell you that police sub inspector used slang and foul language to father of nation Shahid Bangabandhu Sheikh Mujib, sheikh kamal, sheikh jamal and sheikh fazlul haque moni at that midnight while I was coming from FDC Studio. After 14 days my elder brother took out me from the custody and finally PG Hospital for mental treatment. Dr. said its not mental case, just keep him as he as wants to do.

Second thing: I was in Japan in 1992. On e day I have participated 21 February program which was arranged by Bangladesh Embassy of Tokyo, Japan. The program will be inaugurated by the Deputy High Commissioner Bangabandhu murderer Lt. Col. Rashed Choudhury instead of the High Commissioner. The ex student leader Md. Kofiluddin, Akbor, Prince, mezbah, Apu sarwar will not allow Rashed Choudhury to touch the national and black mourn flags. They made rally to protect him from the inauguration program and I was one of them to protest & postpone entire program and if killer Rashed Choudhury inaugurate the program we will not perform at the same program. High Commission called police nearby 5 hundreds of police surround us. Police commissioner came and spokes all of us, than he realized the real situation. That was an ideals decision by all of us.

The empty ground of Bengali Nation will never be complete without referring to Shahid Bangabandhu Sheikh Mujib & late four National Leaders. I am writing these songs in remembrance of those heroes given their valuable lives for the great victory of Bangladesh. It is my great pleasure that I was close to them all in 1972-1975 August 15.

More interesting some of story I’d like to tell you. Later on I was PS to Md. Noor Ali, Chairmen & Managing Director, Unique Group (1997-2001). Noor Ali was nominated by Awami League in 2001 for Nawabganj constituency. Late Agriculture Economist Shankar Goswami, President Bangladesh Student League (former APS to HPM AFM Bahauddin Nasim was the Secretary General of GOSWAMI NASIM COUNCIL) was political secretary. Late Shankar dada and I lead the entire election campaign at Nawabganj in 2001. I have written 10 songs for that election and published an album in favor of BOATS & NOOR ALI. You know 2001 National Assembly Election was engineering by the army and CIA PISI so Awami league failure to get the power.

Meanwhile, all the leaders are looking for their future position; the party is totally out of control, out of rules/resolutions & not united actively, constructively on the grassroots level, which will look after? Don’t know who will takecare of the party? Don’t know those are really dedicated they're in out of the cabinet. She is trying to solve the problem other than new cabinet members are little deference.

Thereafter, it was very sad heart paining story. Some of miscreants suddenly had attacked to Unique Group to heats NOOR ALI but he was in out only they found some of staffs and me. They hits me, kicks me as the human people some times beating the animals. They took my hair from my foreheads’. I apologized for my campaign, album & supporting Awami league. I said forgive me, I beg pardon as a freedom fighter to them. Leave me the country, I will never come and never sing any songs of Bangabandhu & Awami league. Everything i have reported to present Finance Minister and other but no response properly and those miscreants had hurt me still their in Gulshan Banani area. Being a freedom fighter I want justice. I want a major punishment of OC Nassir who was in Gulshan PS in 2002. Still I don't know is he in job or not?

No more dear friends ……………The memorial music album of Bangabandhu “mukthir gaan” 1 2 & 3 you may listen on: youtube.com/muktimusician

Sunday, May 15, 2016

শেখ হাসিনার বৈশ্বিক নেতৃত্বঃ বিশ্বশান্তি ও উন্নয়ন প্রসঙ্গ ‘দেশ ও বিশ্বপরিমন্ডলে শেখ হাসিনা


বিশ্বশান্তি ও উন্নয়ন প্রসঙ্গ
‘দেশ ও বিশ্বপরিম-লে শেখ হাসিনা আজ গণতন্ত্র, উন্নয়ন, ন্যায়বিচার ও শান্তির প্রতীক। তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘে অনেকগুলো প্রস্তাব আনে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানবকল্যাণ, টেকসই উন্নয়ন এবং সকল জাতিসত্তার অব্যাহত উন্নয়ন ও মুক্তি।’

ড. আব্দুল মোমেন: প্রাণঘাতী যুদ্ধ-বিগ্রহ আর অযুত মানুষের হত্যাযজ্ঞের ওপর দাঁড়িয়ে শান্তির অন্বেষায় ১৯৪৫ সালে যে বিশ্ব সংস্থাটির জন্ম, সেই জাতিসংঘ পরিপূর্ণারূপে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সফল হয়েছে কি-না তা এখনও বিশ্বজুড়ে একটি আলোচ্য বিষয়। তবুও সাবেক মহাসচিব দ্যাগ হ্যামার্শ্যল্ড-এর ভাষায় বলতে হয়, ‘জাতিসংঘ আমাদের স্বর্গে নিতে না পারলেও নরক থেকে দূরে রাখতে সমর্থ হয়েছে।’ পৃথিবীর নানা অঞ্চলের সংঘাতপূর্ণ বিষয় ও সমস্যার ওপর আলোচনা, বিতর্ক ও সংলাপ যেমন জাতিসংঘ আয়োজন করে চলেছে, তেমনি সংস্থাটি অন্তত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এই পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখতে সমর্থ হয়েছেÑ এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। আশার কথা হচ্ছে, এই যে জাতিসংঘের নিরলস প্রয়াসের কারণেই আজ পৃথিবীতে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমেছে, প্রসূতি মায়েরা অধিক হারে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিচ্ছে, লাখ লাখ শিশু স্কুলে যাচ্ছে এবং কোটি কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধার ভয়াল চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। তবে এই অর্জন সম্ভব হতো না, যদি বৈশ্বিক নেতৃত্বের গতিশীলতা, দৃঢ়সংকল্প ও প্রয়াস না থাকতÑ যারা স্ব-স্ব দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে ইস্পাত কঠিন সংকল্প নিয়ে কাজ করেছেন এবং এখনও করে চলেছেন। তেমনি এক নেতৃত্ব জাতিসংঘের স্বীকৃৃতিসহ সারা পৃথিবীতে সুশাসনের জন্য নিজের দেশের সম্মান ও গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। নিজের দেশসহ সারা পৃথিবীতেই নিরাপত্তা, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্তি এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য এই নেতৃত্ব বিশ্বসভায় অগ্রসর অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। সেই নেতৃত্ব আর কেউ নন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লেও আজ ন্যায় ও সুশাসন এবং উন্নয়নের প্রতীক বলে খোদ জাতিসংঘই বলছে বাংলাদেশ ও দেশটির নেতা শেখ হাসিনার কথা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন সুশাসন ও মানবতার প্রতি বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার এই সংকল্প? কেন তিনি নিজের দেশের মানুষ এবং বিশ্বের জন্য দারিদ্র্য দূরীকরণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত? কেন তিনি বৈষম্যহীন এবং সকলের অংশগ্রহণমূলক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি ‘সোনার বাংলা’ গঠনের স্বপ্নে বিভোর? কেন তিনি জাতিসংঘের নেতৃত্বে বিশ্বে সন্ত্রাস ও ধর্মীয় উগ্রবাদমুক্ত পৃথিবী উপহার দিতে প্রয়াসী? কেন তিনি নিজের দেশ এবং পৃথিবীর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় এতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ? জাতি, লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ এবং দেশের সীমারেখা নির্বিশেষে কেন তিনি একটি সহনশীল ও নিরাপদ বিশ্ব গঠনে জাতিসংঘকে অকুণ্ঠ সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছেন? কেন দৃঢ়ভাবে জাতিসংঘ সনদের আলোকে আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং বহুমাত্রিক কূটনৈতিক তৎপরতার প্রতি এতটা আস্থাশীল হয়ে বৈশ্বিক শান্তির পতাকা বয়ে বেড়াতে তিনি সদা তৎপর? এ প্রশ্নগুলো গভীরভাবে ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে।
শেখ হাসিনা এমন একটি সমাজের মানুষ যেখানে সুদূর অতীত থেকেই, ১৪৯২ সালে কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার বা ষোড়শ শতাব্দীর ইউরোপীয় শিল্প বিপ্লবেরও আগে, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ছিল। কবি চ-ীদাসের ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’, কিংবা কাজী নজরুল ইসলামের ‘গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান’Ñ এসব লেখায় আমরা সেই ইতিহাসের সাক্ষ্য পাই। চ-ীদাসের এ দর্শনতত্ত্ব বাঙালির মনন ও মানসের এতটাই গভীরে প্রোথিত যে তা শতাব্দীর পর শতাব্দী উচ্চারিত হয়েছে। মানবতাই সবার ঊর্ধ্বেÑ তেমনি এক আলোকিত পরিম-ল থেকে উঠে এসেছেন শেখ হাসিনা। তিনি এমন এক পরিবার থেকে এসেছেন, দেশ ও মানবতার জন্য আত্মত্যাগ যাদের অপরিসীম। তার পিতা সারাটা জীবন অতিবাহিত করে গেছেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য যাকে জেল খাটতে হয়েছে জীবনের দীর্ঘ সময়। তিনি চেয়েছিলেন একটি শোষণমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র যেখানে সকলের জন্য সমানাধিকার, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার,
অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। তার স্বপ্ন ছিল এমন একটি দেশ যার মূল ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, শান্তি-সমৃদ্ধি এবং জননিরাপত্তা; যেখানে থাকবে না ক্ষুধা-দারিদ্র্য, শোষণ এবং অবিচার। এহেন একটি শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের প্রত্যয়ে যখন বঙ্গবন্ধু আত্মনিয়োগ করেছেন তার সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে, ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালে তাকে সপরিবারে হত্যা করে পরাজিত পাকিস্তানিদের দোসর এদেশীয় ঘাতকচক্র। ওই ভয়াল হত্যাকা-ে শেখ হাসিনা কেবল তার পিতাকেই নয়, হারান পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে; এমনকি তার ৯ বছরের ছোট্ট শিশু ভাইকেও রেহাই দেয়নি খুনিরা। শুধু তিনি নিজে এবং তার ছোট বোন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
মানুষের জন্য শেখ হাসিনার জীবনসংগ্রাম এখানেই শেষ নয়, তিনি এ পর্যন্ত ২৩ বার প্রাণঘাতী হামলার শিকার হয়েছেন। প্রতিটি হামলার ক্ষেত্রেই তার প্রিয় রাজনৈতিক সহকর্মীদের অনেকেই নিহত বা আহত হয়েছেন; নয় তো পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে, প্রিয় সহযোদ্ধাদের হারিয়েও শেখ হাসিনা দমে যাননি। তার লড়াই-সংগ্রাম চলছে। সারাবিশ্বে আর কোনো দেশে এমন একজন নেতা খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি নিজের সর্বস্ব হারিয়েও দেশের আপামর জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার এবং একটি উন্নত-সুন্দর জীবন প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি নিয়ত সংগ্রাম করে চলেছেন। দেশে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষাসহ সকল মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবিচল থেকে তিনি কাজ করে চলেছেন নিরন্তর।
এতে সন্দেহের কোনো
অবকাশই নেই যে দেশ ও বিশ্বপরিম-লে শেখ হাসিনা আজ গণতন্ত্র, উন্নয়ন, ন্যায়বিচার ও শান্তির প্রতীক। তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘে অনেকগুলো প্রস্তাব আনে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানবকল্যাণ, টেকসই উন্নয়ন এবং সকল জাতিসত্তার অব্যাহত উন্নয়ন ও মুক্তি। উদাহরণস্বরূপ, তারই নেতৃত্বে ও তারই আনীত প্রস্তাবের কারণে জাতিসংঘে আজ ‘উন্নয়নের অধিকার’ একটি মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশের সভাপতিত্বে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ১৩২৫ নম্বর প্রস্তাবের কল্যাণে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণের প্রতিটি পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার কল্যাণেই আজ জাতিসংঘে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ বা ‘ঈঁষঃঁৎব ড়ভ চবধপব’ চালু হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী জোরালভাবে অনুসৃত হচ্ছে।
কেন এই শান্তির সংস্কৃতি এতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক? এর মূলনীতি হচ্ছে এমন একটি আবহ সৃষ্টি করা যার মাধ্যমে পরমত সহিষ্ণুতা এবং অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত করা যায়Ñ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা এবং নৃ-গোষ্ঠীগত পরিচয় নির্বিশেষে। কেননা, শান্তির সংস্কৃতি বিশ্বাস করে যে, অসহিষ্ণুতা এবং ঘৃণা থেকেই সর্বপ্রকার বিরোধ, সহিংসতা ও যুদ্ধের উৎপত্তি। তাই সকলের মাঝে যদি পারস্পরিক সহিষ্ণুতা এবং শ্রদ্ধাবোধ সৃজন করা যায়, তা হলেই আমরা যুদ্ধহীন ও সংঘাতমুক্ত এক পৃথিবী গড়তে পারব। তা হলেই সম্ভব হবে স্থায়ী উন্নতি, সমৃদ্ধি ও শান্তি অর্জনÑ জাতিসংঘের মূল লক্ষ্যও তাই। আশার কথা এই যে বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনা অনুসৃত শান্তির সংস্কৃতি আজ বিশ্বজুড়ে, সকল জাতির মাঝেই ব্যাপকভাবে অনুভূত হচ্ছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ আজ সর্বোচ্চ সৈন্যদাতা রাষ্ট্র। যুদ্ধ আক্রান্ত রাষ্ট্রে যাতে সাধারণ মানুষ এবং শান্তিরক্ষীরা সুরক্ষিত থাকে সে বিষয়ে শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর। বিশ্বে তিনিই একমাত্র নেতা যিনি এমনকি বড়দিনের ছুটির মাঝেও জাতিসংঘ মহাসচিবের অনুরোধে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শান্তিরক্ষী প্রেরণের নির্দেশনা দিয়েছেন। শান্তিরক্ষী প্রেরণে তিনি কখনোই কার্পণ্য করেননি। এটি কোনো বিস্ময়ের ব্যাপার নয় যে ১ লাখ ৩৮ হাজার শান্তিরক্ষী বাহিনীর সমন্বয়ে জাতিসংঘ সারা পৃথিবীতে শান্তি রক্ষা করতে সমর্থ হচ্ছে যেসব সৈন্যের অনেকেই তাদের জীবনের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। তারা প্রকৃত অর্থেই শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারের দাবিদার।
শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘে দুটি যুগান্তকারী প্রস্তাব আনে ২০১২ সালে, যা সর্বসম্মতিক্রমে বিশ্বসভায় গৃহীত হয়। এর প্রথমটি ছিল অটিজম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার সংক্রান্ত, আর দ্বিতীয়টি জনগণের ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত। তিনি বিশ্বাস করেন, সবারই অংশগ্রহণের সমান সুযোগ রয়েছে, কারোরই বাদ পড়ার কথা নয়। মানবতা ও উন্নয়নে সবাই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী অবদান রাখতে পারে। তাই অটিজমে আক্রান্ত এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের জীবন যন্ত্রণা ও বঞ্চনার বিষয়টি যখন তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন উত্থাপন করেন, বাংলাদেশ দ্রুত এ বিষয়টি বিশ্বসভায় উত্থাপন করে এবং বিশ্বনেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ ও সমর্থন আদায় করে।
অটিজম এবং প্রতিবন্ধিতা সংক্রান্ত অনেকগুলো বড় বড় সভা আহ্বান করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ এবং তার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সামনে বিষয়টি উত্থাপিত হওয়ার পরপরই মহাসচিব তা সাধারণ পরিষদে সেগুলো প্রস্তাবিত ও অনুমোদিত হয় এবং সদস্য রাষ্ট্রসহ সবকটি জাতিসংঘ সংস্থার কর্মকা-ে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক নেতৃত্বটি অবশ্যই বাংলাদেশের এবং দেশটির নেতা শেখ হাসিনার।
বিগত ৪০ বছরের জাতীয় ও বৈশ্বিক রাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকে শেখ হাসিনা জানেন যে সামনের দিনগুলোতে বিশ্বের প্রধানতম চ্যালেঞ্জগুলো হবে জলবায়ু পরিবর্তন, বেকারত্ব, আর্থিক সংকট, দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধা ও দারিদ্র্য এবং এগুলো থেকে উদ্ভূত হাজারও সমস্যা। তাই তিনি বিশ্বাস করেন এই চ্যালেঞ্জগুলো তখনই মানুষ অতিক্রম করতে সক্ষম হবে যখন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা যাবে। একেই তিনি বলছেন জনগণের ক্ষমতায়ন। এটি সম্ভব হলে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী শক্তি, সক্ষমতা এবং কার্যকরিতার সাথে মানুষ কাজ করতে পারবে, ফলে সবাই সমভাবে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে পারবে। তাই জনগণের ক্ষমতায়নের প্রতি তিনি এতটা গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে জনগণকে ক্ষমতায়িত করা যাবে? বিষয়টিকে তিনি ৬টি আন্তঃসংযুক্ত চলকের দ্বারা বিশ্লেষণ করেছেনÑ প্রথমত; মানুষের ক্ষমতায়ন হবে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্তি সম্ভব হলে, দ্বিতীয়ত; তাদের ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে প্রয়োজনীয় দক্ষতা, কারিগরি জ্ঞান ও মানসম্মত শিক্ষাদানের মাধ্যমে যাতে করে তারা নিজেরাই কর্মসংস্থান বা উপযুক্ত চাকরির ব্যবস্থা করে স্বাবলম্বী হবে, তৃতীয়ত; তাদের ক্ষমতায়ন সম্ভব হতে পারে বৈষম্য ও বঞ্চনার অবসানের মাধ্যমে, চতুর্থত; সন্ত্রাস নির্মূল করে একটি নিরাপদ জীবন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন করা যাবে, পঞ্চমত; এতদিন যারা উন্নয়ন ও মূল জীবনধারার বাইরে ছিল, তাদের অন্তর্ভুক্ত করে ক্ষমতায়ন করা যাবে এবং সর্বোপরি, তাদের ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে ভোটাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে ও শাসন ব্যবস্থায় সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে।
শেখ হাসিনার ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ ধারণাটি জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনসসহ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের নেতৃবৃন্দের মধ্যেও অনুরণিত হয়েছে। ২০১২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ‘রিও+২০ বিশ্ব সম্মেলনে’ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ‘যেমন ভবিষ্যৎ চাই’ শীর্ষক দলিল গ্রহণ করেন যার মধ্যে শেখ হাসিনা প্রণীত জনগণের ক্ষমতায়ন নীতিমালা এবং তার সাথে জড়িত আদর্শ অনুসৃত হয়। উক্ত সম্মেলনে দারিদ্র্য দূরীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়, যার মূল ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে সকলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত স্থিতিশীলতা অর্জন। সম্প্রতি জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাব যা, ‘20130 Agenda for Sustainable WorldÕ বা ÔSDGs’ নামে পরিচিত সেটির মূল ভিত্তিই ছিল রিও+২০ তে অনুসৃত শেখ হাসিনার জনগণের ক্ষমতায়ন তত্ত্ব। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা জাতিসংঘে গ্রহণ করেন ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, যার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের যথার্থভাবেই শেখ হাসিনা প্রণীত জনগণের ক্ষমতায়ন নীতিমালার আলোকে সবার অন্তর্ভুক্তি, মানসম্মত শিক্ষা, প্রযুক্তি হস্তান্তর, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জনগণের অংশগ্রহণ, আইনের শাসন, সুশাসন ইত্যাদি নির্ধারিত হয়।
তার গতিশীল নেতৃত্বে জাতিসংঘে বাংলাদেশ কর্তৃক উত্থাপিত প্রতিটি বিষয়ই এসডিজি-র ১৭টি লক্ষ্য এবং ১৬৯টি উদ্দেশের মাঝে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তি হস্তান্তর, শিল্পায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, অভিবাসন ও উন্নয়ন, মানসম্মত শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ-সমতা, শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার, জলসম্পদের আন্তঃদেশীয় ব্যবস্থাপনা, জীববৈচিত্র্য, নীল অর্থনীতি (সাগর ও মহাসাগর), বিশ্ব আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকতর অংশগ্রহণের সুযোগ, শান্তি ও স্থিতিশীলতা, আইনের শাসন, পারস্পরিক সহযোগিতা, এলডিসি ইস্যু ইত্যাদি।
জাতিসংঘের সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে অবিস্মরণীয় অগ্রগতি, তা মূলত সম্ভব হয়েছে দেশটির নেতা শেখ হাসিনার উন্নয়ন চিন্তা এবং জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে তার অবিচল প্রতিজ্ঞার কারণেই। সম্পদের ব্যাপক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কেবল নেতৃত্বের বিচক্ষণতা, দৃঢ়তা এবং সঠিক দিক-নির্দেশনার কারণেই বাংলাদেশ এই লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এককালে যে দেশকে বলা হয়েছিল ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ (Bottomless Basket), যার ‘সফল হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই’ বিশ্ব মোড়লেরা দেখেনি, সেই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আজ ৬.৩ শতাংশ, তাও আবার এক নাগাড়ে সাত বছর ধরে। চরম দারিদ্র্য ১৯৯১ সালে যেখানে ছিল ৫৭.৮ শতাংশ, ২০১৫ সালে তা কমে এসেছে ২২.৪ শতাংশেরও নিচে। একই সাথে নবজাত শিশু মৃত্যুর হার ৭৩ শতাংশ কমিয়ে আনতে পেরেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সর্বাধিক জনঅধ্যুষিত ও স্বল্প আয়তনের এক দেশের জন্য এই সাফল্য একেবারে কম নয়। আর এই অর্জন সম্ভব হয়েছে কেবল শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই।
দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক বিরোধিতা এবং নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্যও শেখ হাসিনা তার দৃঢ় ও আপসহীন সিদ্ধান্তের দ্বারা দেশকে উন্নয়নের পথে যেভাবে পরিচালিত করেছেন, তার কল্যাণেই বাংলাদেশ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, অথচ পূর্বে দীর্ঘ সময় ধরে দেশটি ছিল খাদ্য ঘাটতির মধ্যে। এই ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য শেখ হাসিনা এবং তার দেশবাসী বিশ্বসভায় সাধুবাদ পেতেই পারেন। আর তারই প্রমাণ আমরা দেখি যখন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল’ এবং ‘নারীর ক্ষমতায়নের উজ্জ্বল নক্ষত্র’। আমেরিকার প্রভাবশালী ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ভাষায় বাংলাদেশ হচ্ছে ‘দক্ষিণ এশিয়ার আলোকবর্তিকা’ আর গোল্ডম্যান শ্যাক্স তাদের গ্লোবাল অবস্থানে বাংলাদেশকে এন-১১ তে উন্নীত করেছে, যার অর্থ হচ্ছে ১১টি অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ।
দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম প্রধান দেশের সুনাম অর্জন করেছে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে একাধিক পদকে ভূষিত করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য এমডিজি-৪ পুরস্কার (২০১০)। সাউথ-সাউথ পুরস্কারে তিনি ভূষিত হন ২০১৩ সালে, দেশজুড়ে ১৩ হাজার ৮০০ কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণকে সফলভাবে ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির সংযোগের আওতায় নিয়ে আসার স্বীকৃতিস্বরূপ। ২০১৪ সালে তাকে সাউথ-সাউথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলোতে নেতৃত্বের দূরদর্শিতার স্বাক্ষর হিসেবে। ২০১৫ সালে তিনি জাতিসংঘ কর্তৃক দুটি পুরস্কারে ভূষিত হন, এগুলো হচ্ছেÑ জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব মোকাবিলায় সফলতার জন্য ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার এবং টেলিযোগাযোগ খাতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থার পুরস্কার বা ‘আইটিইউ অ্যাওয়ার্ড’।
২০০০ সালে যখন জাতিসংঘে সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) ঘোষণা প্রদান করা হয় তখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নেতা হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আবার ২০১৫ সালে যখন ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা (এসডিজি) হয় তখনও তিনি বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে জাতিসংঘে নেতৃত্বদান করেন। তিনি বিশ্বের একমাত্র নেতা যিনি জাতিসংঘের উন্নয়ন সংক্রান্ত এ দুই মাইলফলক ঘোষণার সময় নিজের দেশের নেতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তার দেশ সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে মর্মে ২০০০ সালের সম্মেলনে তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশ্রুতি দেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি রক্ষা করেছেন। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সেই যে সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে। ২০১৫ সালের সম্মেলনে আবার যখন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেন (যা ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জন করতে হবে)
তখন শেখ হাসিনা বিশ্বসভায় এই প্রতিশ্রুতি দেন যে তার দেশ এই লক্ষ্যমাত্রাও যথাসময়ে পূরণ করবে। শুধুু সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকেন নি তিনি, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে তারই স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী ও বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা। এ হবে এমন এক বাংলাদেশ যেখানে সবাই পাবে সমানাধিকার, ন্যায়বিচার এবং সুষম উন্নয়নের সুযোগ। যেখানে সমৃদ্ধি ও শান্তির মাঝে বাস করবে দেশের প্রতিটি মানুষ। সেই স্বপ্নই দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
সাউথ-সাউথ দেশগুলোর অর্থনৈতিক ক্ষমতার পরিধি ক্রমেই বাড়ছে। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ ২ গুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এক বিশাল বাজারে পরিণত হবে এ দেশগুলো। তা সত্ত্বেও এ দেশগুলোর পূর্ণ সম্ভাবনা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এ দেশগুলোর প্রতিবছর ৫ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে। বর্তমানে বৈদেশিক সাহায্য স্কিমের আওতায় উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রসমূহ বছরে ১৩৮ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে থাকে যার মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে যায় মাত্র ৩৮ থেকে ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অর্থ পর্যাপ্ত নয়। সাউথ-সাউথ দেশগুলোর অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোার জন্য এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অগ্রগতি যথাযথভাবে তদারকি ও মূল্যায়নের জন্য বাংলাদেশ সাউথ-সাউথ দেশগুলোর অর্থ ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রীদের একটি ফোরাম গঠনের প্রস্তাব করেছে, যা আন্তর্জাতিক মহল কর্তৃক সমর্থিত হয়েছে। সম্প্রতি চীন সাউথ-সাউথ সহযোগিতার জন্য ১ বিলিয়ন ডলারেরও

‘আধুনিক বিশ্বে বাংলাদেশ আরও একটি কারণে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করছে, তা হলোÑ একটি শক্ত, সৃজনশীল ও পরিশ্রমী অভিবাসী শ্রমিকদের দেশ হিসেবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আজ বাংলাদেশের প্রায় ৯০ লাখ প্রবাসী নাগরিক রয়েছেন যারা কঠোর পরিশ্রম বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখছেন, তাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছেন।’ বেশি অনুদানের ঘোষণা দিয়েছে।
শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সক্ষম হয়। এ কথা আজ সারাবিশ্ব জানে যে, ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণ তাদের বুকের রক্ত দিয়েছে। সেই আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ পৃথিবীর সব জাতির মাতৃভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার প্রয়াসে সেই দিনটিকে জাতিসংঘ সম্মানিত করেছে, যা আজ বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব দেশে পালিত হচ্ছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আইনের শাসনে প্রতিষ্ঠার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সাথে যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল সেই বিষয়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সমুদ্র-আইন সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত তিনি গ্রহণ করেন, তারই ফলস্বরূপ বাংলাদেশ তার সমুদ্রসীমার ওপর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্র ভারত এবং মিয়ানমারও তাদের আইনগত ন্যায্য পাওনা পেয়েছে। কোনো সংঘাত বা যুদ্ধ ছাড়াই এহেন বিরোধ নিষ্পত্তির ঘটনা পৃথিবীতে বিরল।
শেখ হাসিনার শাসনের প্রথম মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) বাংলাদেশে কয়েকটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে। এর প্রথমটি ছিল ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের সমস্যা গঙ্গা নদীর পানির বণ্টনের ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর। এর মাধ্যমে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ গঙ্গা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় যে ঐতিহাসিক ঘটনা সেই সময়ে ঘটে সেটি হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর। যে সমস্যার আবর্তে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের দোলাচলে সেই সময় পর্যন্ত ২৫ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল, রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপ নিয়ে শেখ হাসিনা সেই দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের অবসান ঘটান বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে। পৃথিবীর সাম্প্রতিক ইতিহাসে শান্তি প্রতিষ্ঠার এমন নজির বিরল। মার্কিন কংগ্রেস এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এই সাহসী দুই চুক্তির জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্বের ভূয়সী প্রসংশা করেছে। সম্প্রতি কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনা, রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও প্রশাসনিক কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ভারতের সাথে অর্ধশতক ধরে ঝুলে থাকা ছিটমহল সমস্যার সমাধান করেছেন ৬৮ বছর আগের ‘সীমান্ত নির্ধারণ চুক্তি’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে। ফলে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার এবং ন্যায়বিচার পেয়েছে দীর্ঘদিন ভাগ্যবিড়ম্বিত থাকা উভয় দেশের ছিটমহলবাসী। প্রকৃত অর্থেই শেখ হাসিনা শান্তি ও স্থিতিশীলতার মূর্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জন্য। আশার আলোকবর্তিকা হয়ে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন বিশ্বের শত কোটি নিপীড়িত মানবতার জন্য।
আধুনিক বিশ্বে বাংলাদেশ আরও একটি কারণে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করছে, তা হলোÑ একটি শক্ত, সৃজনশীল ও পরিশ্রমী অভিবাসী শ্রমিকদের দেশ হিসেবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আজ বাংলাদেশের প্রায় ৯০ লাখ প্রবাসী নাগরিক রয়েছেন যারা কঠোর পরিশ্রম বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখছেন, তাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছেন। একই সাথে নিজেদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা স্বদেশে পাঠিয়ে তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তবে এসব প্রবাসী শ্রমিকদের জীবনে থাকে অজ¯্র দুঃখগাঁথা, বঞ্চনা আর প্রতারণা কাহিনি। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা নিজেদের ন্যায্য বেতনটুকু থেকেও বঞ্চিত হন। অথচ এই প্রবাসীরাই মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে কি অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন বিদেশের মাটিতে। আবার আজ তারা সেই বিদেশে থেকেও নিজের দেশকে সমৃদ্ধ ও উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে রাখছেন ব্যাপক অবদান। সহ¯্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের আয় রেখেছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। দেশে বিনিয়োগ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি। ৯০ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের ওপর দেশের প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ নির্ভর করে, যাদের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এই অভিবাসী শ্রমিক এবং বিদেশে অবস্থানরত দক্ষ বাংলাদেশি পেশাজীবীদের স্বীকৃতি প্রদান করেছে; তাদের সুরক্ষা এবং দেশে তাদের বিশেষ সম্মানের ব্যবস্থা করেছে এবং তাদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য গ্রহণ করেছ নানামুখী পদক্ষেপ। প্রবাসে তাদের সমস্যা সমাধানে নিদের দেশের সরকারি প্রতিনিধি/কূটনীতিকদের যেমন তিনি নির্দেশনা দিচ্ছেন ঠিক তেমনি বিশ্বসভায় তিনি এই দাবি তুলেছেন যে প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে হোস্ট কান্ট্রি বা শ্রমিকদের অবস্থানকারী রাষ্ট্রের দায়িত্ব অনেক। তাদেরই এটি নিশ্চিত করা কর্তব্য যাতে তাদের দেশে প্রবাসী শ্রমিকদের কেউ শোষণ, নির্যাতন বা কোনোরকম বৈষম্য বা বঞ্চনার শিকার হতে না হয়। একই সাথে উন্নত দেশগুলোরও এ বিষয়ে যতœবান হওয়া উচিত যাতে তাদের দেশে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত হয় এবং সেই সব সংগ্রামী শ্রমজীবী জনতা যেন কোনো প্রকার শোষণ, নির্যাতন বা প্রতারণার শিকার না হন।
দেশে এবং বিদেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের অধিকার আদায়ে এতটা সোচ্চার এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কণ্ঠস্বর হতে পারে বলেই হয়তো বাংলাদেশ গত ৬টি বছরের জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনে এবং বিভিন্ন কমিটিসমূহের নির্বাচনে জয়লাভ করে নির্বাচিত হয়েছে। বস্তুত, এ সময়ের মধ্যে কোনো আন্তর্জাতিক নির্বাচনেই বাংলাদেশ পরাজিত হয়নি; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রসমূহ বাংলাদেশের কথা ভেবে, বাংলাদেশ নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে ওইসব নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারও করে নিয়েছে। বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ তথা বিশ্ব নেতৃত্বের আস্থা এবং প্রগাঢ় ভরসারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে এসব আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে।
জাতিসংঘের সেকেন্ড কমিটির চেয়ার হিসেবে অধিকাংশ বিতর্কেই বাংলাদেশ সকল সদস্যকে মতৈক্যে নিয়ে আসতে পেরেছে। পিস বিল্ডিং কমিটি (পিবিসি) বা অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইসিওএসওসি) চেয়ার হিসেবে বিশ্বব্যাংকে জাতিসংঘ কমিটিসমূহের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশে। সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের চেয়ার হিসেবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বাধাসমূহ ও করণীয় চিহ্নিতকরণে বাংলাদেশ নেতৃস্থানীয় ভূমিকা গ্রহণ করে। জাতিসংঘের ব্যুরো সদস্য এবং এলডিসি গ্রুপের চেয়ার হিসেবে ইস্তাম্বুল কর্মপরিকল্পনা (আইপিএও) প্রণয়নে বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রাখে; শুধু তাই নয়, জাতিসংঘের বিভিন্ন ফান্ড যেমন ইউনিসেফ, ইউএনডিপি, ইউএন উইমেন, জাতিসংঘ জনসংখ্যা কমিশন ইত্যাদির চেয়ার হিসেবে ওইসব অঙ্গ সংগঠনের কর্মপরিকল্পনায় ইস্তাম্বুল কর্মপরিকল্পনা অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যতম ভূমিকা পালন করে।
সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতিসংঘ কমিটির ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে ২০১০ সালে বাংলাদেশ উক্ত কমিটির প্রস্তাব সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মতৈক্যের অর্জনে সফল হয়। ‘মানবপাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতিসংঘের বন্ধু’ রাষ্ট্রসমূহের সদস্য হিসেবে জাতিসংঘের প্রস্তাব পাসের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মানবপাচার প্রতিরোধ ও অবসানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সাহসের সাথে উটের জকি ও দাস হিসেবে শিশুদের ব্যবহারের বিরুদ্ধে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মাঝে সোচ্চার জনমত গড়ে তোলেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি শিশুদের উদ্ধারের নির্দেশ দেন ও তাদের উদ্ধার পরবর্তী পুনর্বাসনের পদক্ষেপ সংক্রান্ত সার্ক সম্মেলনে ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘের ‘ফ্রেন্ডস অব মিডিয়েশন’, ‘ফ্রেন্ডস অব ইনএ্যলিনেবল্ রাইটস অব প্যালেস্টাইন’, ‘ফ্রেন্ডস অব নো ফুড ওয়েস্ট, নো ফুড লস’ ইত্যাদি ভূমিকায় মানবতার মর্যাদা রক্ষা এবং জাতিসংঘ সদনের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
বস্তুতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘে একটি অত্যন্ত সম্মানজনক সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এবং বর্তমানে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশকেই চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। কেবল সর্বোচ্চ সৈন্য প্রেরণকারী দেশ হিসেবেই নয়, সক্ষমতার সাথে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাকারী দেশ হিসেবেও বাংলাদেশের সুনাম আজ জাতিসংঘে ব্যাপক। জাতিসংঘের ‘হি অ্যান্ড শী’ প্রোগ্রামের চ্যাম্পিয়ন হিসেবেও বাংলাদেশের নাম চলে আসে সবার আগে। জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘শিক্ষাই সর্বাগ্র’ শীর্ষক প্রকল্পে এবং মহাসচিবের স্বাস্থ্যরক্ষা সংক্রান্ত উদ্যোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে গণ্য করা হয়। মহাসচিবের নেতৃত্বে শান্তিরক্ষী নিয়োগ সংক্রান্ত সিনিয়র পরামর্শক কমিটির সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীদের নীল হেলমেট প্রদানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত আঞ্চলিক রিভিউ কমিটির ঢাকা কনফারেন্সের আয়োজন করে বাংলাদেশ, ২০১৪ সালে এবং সদস্য রাষ্ট্রসমূহের শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ দান করে। প্রতি ১০ শান্তিরক্ষীর মধ্যে একজন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ নারী শান্তিরক্ষীদের জন্য নীল হেলমেট, বর্ম ও তলোয়ার চালানো এবং পুলিশের একটি নারী ইউনিট বসানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
জলবাযু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে জাতিসংঘে অত্যন্ত সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অপূরণীয় ক্ষতি ও চ্যালেঞ্জকে বিশ্ববাসীর সামনে যথার্থভাবে তুলে ধরতে তিনি সদা সচেষ্ট থেকেছেন। তিনিই একজন নেতা যিনি এ বিষয়টিকে বিশ্ববাসীর সামনে বারংবার তুলে ধরেছেন যে, পরিবেশ দূষণকারী না হয়েও স্বল্পোন্নত ও দ্বীপ-রাষ্ট্রসমূহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সবচেয়ে বড় হুমকির মধ্যে রয়েছে। কেবল বাগাড়ম্বর বা উচ্চবাচ্য না করে এ বিষয়টি তিনি কর্মপরিকল্পনার মধ্যে গ্রহণ করেছেন এবং বিষয়টি নিয়ে কীভাবে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগুনো যায় তা নিজে তদারক ও কাজ করে চলেছেন। আজ সম্পদের স্বল্পতা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সংক্রান্ত দুটি ফান্ড গঠন করেছে। তাই সংগত কারণেই জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) তাকে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। কেননা পরিবেশ সুরক্ষার জন্য তিনিই বিশ্বের সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর; এবং পরিবেশ নীতিমালা গঠনের ক্ষেত্রে জোরাল ভূমিকা রেখেছেন। জলবায়ু ঝুঁকি ফোরাম (সিভিএফ) এবং জলবায়ু ঝুকিপ্রবণতা তদারকি (সিভিএম) গঠন করেছেন তিনিই। তার প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়েই জাতিংঘে ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিষয়ের দায়িত্ব বিষয়ক রাষ্ট্রদূত’ ফোরাম (Ambassadors with Responsibility to Climate Change-ARC) এবং ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বন্ধু’ (Friends of Climate Change-FCC) গঠন করা হয়েছে, যারা জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ ঘোষণার পরই আমরা দেখতে পাই যে অন্যান্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এই জটিল ইস্যুতে এগিয়ে আসছেন।
যুদ্ধ-বিগ্রহ, ভয়াল বন্যা, অনাবৃষ্টি, ক্ষরা, নদীভাঙন ইত্যাদি নানা কারণে সাম্প্রতিককালে দেশে দেশে যে হারে মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে বা নিজ দেশে কাজ হারিয়ে দেশান্তরী হয়ে পড়ছে জীবিকার তাগিদে, কিংবা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় খুঁজছে বিভিন্ন দেশে তখন সেই সব কঠিন সমস্যার কারণ খুঁজে আর কোনো মানুষ যেন শরণার্থী না হয়, বাস্তুচ্যুত না হয় তার ব্যবস্থা করার জন্য জোরাল দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। সম্পদশালী দেশগুলো সম্পদের অপব্যবহারের মাধ্যমে আজ পৃথিবীর পরিবেশের এই দশা করেছে, যদিও তাদের অবিমৃষ্যকারিতার ফল পেতে হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে, যারা হয়তো কোনোভাবেই এই ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা জলবায়ু’র কারণে উদ্বাস্তু হওয়ার জন্য দায়ী নয়। অথচ তাদেরই সবচেয়ে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। বাংলাদেশ মনে করে এই অবস্থা হতে উত্তরণের দায় এবং দায়িত্ব উভয়ই উন্নত বিশ্বকে নিতে হবে। হয় তাদের এসব নানান প্রক্রিয়ায় করা পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে; অথবা তাদের এমন কাজ করতে হবে যাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ না বাধে বা মানুষ নিজের দেশ ছাড়তে বাধ্য না হয়।
শেখ হাসিনা কথা নয়, কাজে বিশ্বাসী। লক্ষ্য অর্জনে তিনি পিছপা নয় এক কদমও। তার অক্লান্ত প্রয়াসের ফলে বাংলাদেশের কর্মজীবী জনসংখ্যার মাঝে আজ নারীর অংশগ্রহণ প্রায় ৩৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা পূর্বে ছিল মাত্র ৭ শতাংশ। আজ বাংলাদেশে সরকার প্রধান একজন নারী। জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং সংসদ উপনেতাও নারীÑ নারীর ক্ষমতায়নের এ এক অনবদ্য সংযোগ। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ সেই গুটিকয়েক রাষ্ট্রের মধ্যে অন্যতম যেখানে বছরের শুরুতে দেশব্যাপী শিশুদের মধ্যে ৩২৬ মিলিয়ন বই বিতরণ করা হয় বিনামূল্যে। বাংলাদেশ সেই রাষ্ট্র যেখানে এনজিওরা উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সরকারের সাথে সমান তালে অংশগ্রহণ করে। তাই বাংলাদেশ আজ তার উদ্ভাবনী সুশাসন প্রক্রিয়া এবং যুক্তির নিরখে চলার জন্য বিশ্ব দরবারে সম্মানিত। সামগ্রিক এই প্রক্রিয়ায়, সন্দেহ বা বিস্ময়ের কোনো অবকাশই নেই যে, সেই বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনা, আজ জাতিসংঘ তথা বিশ্ব পরিম-লে শান্তি ও ন্যায্যতার এক মূর্ত প্রতীক হিসেবে নিজের দেশ ও জনগণকে তুলে ধরেছেন সবার ওপরে।
জয়তু বিশ্বনেতা শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান
* জনগণের ক্ষমতায়ন মডেল : অস্থিরতা, সহিংসতা, পরমত অসহিষ্ণুতা, বৈষম্য এবং ব্যাপক জন-অসন্তোষের ক্ষেত্রে এই মডেল বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
* কালচার অব পিস : বিগত সময়ে সরকারের থাকাকালীন বাংলাদেশ কর্তৃক জাতিসংঘে শান্তির সংস্কৃতির ধারণা প্রচলন করা হয়। জাতিসংঘের ভিতরে ও বাইরে এই ধারণা ব্যাপক সমর্থন লাভ করে; কেননা এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, যা সমগ্র জাতিসংঘ ব্যবস্থার মাঝে অনুরণিত হয়।
* শান্তিরক্ষা কার্যক্রম (পিস কিপিং) : শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা সর্বজনবিদিত ও স্বীকৃত। জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিম-লে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর। তার গতিশীল নেতৃত্বে বিশ্বে আজ সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে সমাদৃত বাংলাদেশ।
* শান্তি বিনির্মাণ (পিস বিল্ডিং) : তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ শান্তি বিনির্মাণের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছে। স্বল্পদিন হলো এ সংক্রান্ত কমিশন গঠিত হয়েছে, যা ইউএন পিস বিল্ডিং কমিশন নামে পরিচিত। বাংলাদেশ এর গুরুত্বপূর্ণ মিটিংসমূহে সভাপতিত্ব করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতার কারণে এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রমের আলোচনায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে।
* বহুমাত্রিক নেতৃত্ব : নানামুখী জাতীয় ও বৈশ্বিক ইস্যুতে চ্যালেঞ্জ নিতে পিছপা নন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার অবিচল নেতৃত্বে বাংলাদেশে জাতিসংঘের বিভিন্ন কমিটি এবং অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থায় সভাপতি এবং সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছে। বিগত ছয় বছরে বাংলাদেশে কোনো একটি নির্বাচনেও পরাজিত হয়নি। সকল দেশ ও তাদের নেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ এবং তার নেতা শেখ হাসিনা।
* সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মডেল দেশ : জাতিসংঘ মহাসচিবের ভাষ্যমতে বাংলাদেশ এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কেবল স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যেই নয়, অনেকগুলো উন্নত দেশের চেয়েও বাংলাদেশের এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সাফল্য ব্যাপক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে এর সফল বাস্তবায়ন তদারক ও মূল্যায়ন করে থাকেন এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।
* ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের সুরক্ষা ও নেতৃত্ব দান : বর্তমানে বাংলাদেশ ৪৮টি স্বল্পোন্নত দেশের নেতা ও মুখপাত্র। তাই জাতিসংঘ তথা আন্তর্জাতিক ফোরামে এসব দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের নেতৃত্বও বাংলাদেশেরই। সর্বসম্মতভাবে বাংলাদেশ এই পদে নির্বাচিত হয়; বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাই বাংলাদেশকে এই পদে আসীন করেছে। এলডিসি রাষ্ট্রসমূহের স্বার্থরক্ষায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
* ভিন্ন জীবনের মানুষের সমস্যাকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসা : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই জাতিসংঘের সকল রাষ্ট্রের কাছে আজ অটিজমে আক্রান্ত শিশু ও অটিজম সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের সমস্যাবলি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। এ সংক্রান্ত বাংলাদেশের প্রস্তাব পৃথিবীর সব কটি রাষ্ট্রের অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করেছে। বিষয়টির প্রবক্তা হিসেবে বাংলাদেশের নাম আজ সব দেশ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।
* জলবায়ুর ঝুঁকি আক্রান্তদের সমস্যায় নেতৃত্ব : জাতিসংঘের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সক্রিয়ভাবে কাজ করে দেখিয়েছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ঝুঁকি কতটা। এ সমস্যার কারণ খুঁজে আর কোনো মানুষ যেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শরণার্থী না হয়, বাস্তুচ্যুত না হয় তার ব্যবস্থা করার জন্য জোরাল দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। সম্পদশালী দেশগুলো সম্পদের অপব্যবহারের মাধ্যমে আজ পৃথিবীর পরিবেশের এই দশা করেছে, যদিও তাদের অবিমৃষ্যকারিতার ফল পেতে হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশগুলো, যারা হয়তো কোনোভাবে এই ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা জলবায়ু’র কারণে উদ্বাস্তু হওয়ার জন্য দায়ী নয়। অথচ তাদেরই সবচেয়ে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। বাংলাদেশ মনে করে, এই অবস্থা হতে উত্তরণের দায় এবং দায়িত্ব উভয়ই উন্নত বিশ্বকে নিতে হবে। হয় তাদের এসব নানান প্রক্রিয়ায় করা পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে; অথবা তাদের এমন কাজ করতে হবে যাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ না বাধে বা মানুষ নিজের দেশ ছাড়তে বাধ্য না হয়। জলবায়ু ঝুঁকি ফোরাম (সিভিএফ) এবং জলবায়ু ঝুঁকিপ্রবণতা তদারকি (সিভিএম) গঠন করেছে বাংলাদেশ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর প্রতিষ্ঠা করেন জাতিসংঘের ৬৭তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে।
* আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ আইনি সমাধান : শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সাথে যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল সেই বিষয়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালে (International Tribunal on the Law of the Seas-ITLOS) যাওয়ার যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত তিনি গ্রহণ করেন, তারই ফলস্বরূপ বাংলাদেশ তার সমুদ্রসীমার ওপর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্র ভারত এবং মিয়ানমারও তাদের আইনগত ন্যায্য পাওনা পেয়েছে। কোনো সংঘাত বা যুদ্ধ ছাড়াই এহেন বিরোধ নিষ্পত্তির ঘটনা পৃথিবীতে বিরল।
* জাতিসংঘের মাধ্যমে অভিবাসীদের অধিকারের সুরক্ষা : অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষার জন্য নিরলস কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সংক্রান্ত জাতিসংঘ কমিটিতে তিনি যথার্থভাবে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন এবং তার পক্ষে সমর্থন আদায়ে সক্ষম হয়ছেন। অভিবাসী শ্রমিকের মানবাধিকার, কাজের পরিবেশ, বেতন ও নিরাপত্তা এসব বিষয়ে নিশ্চিত করার জন্য সকল রাষ্ট্রের প্রতি তিনি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
* সাউথ-সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কো-অপারেশনের কণ্ঠস্বর : সাউথ-সাউথ সংক্রান্ত জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সভাপতি বাংলাদেশ। আর সাউথ-সাউথের কণ্ঠস্বর হচ্ছেন শেখ হাসিনা। সম্প্রতি এই রাষ্ট্রসমূহের সাফল্য ব্যাপক, যার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দৃশ্যমান।
জাতিসংঘ সনদের মূল লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়ন
* প্রথমত : সহিষ্ণুতার চর্চা এবং ভালো প্রতিবেশী হিসেবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান;
* দ্বিতীয়ত : আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার সাথে একতাবদ্ধ থাকা;
* তৃতীয়ত : এই নীতির প্রতি অবিচল থাকা যে শক্তি প্রয়োগ কোনোভাবে করা হবে না, একমাত্র সামষ্টিক স্বার্থ ছাড়া;
* চতুর্থত : বিশ্বের সকল মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহকে কাজে লাগানো;
* প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সনদের এসব মূলনীতির আলোকে একটি সুন্দর, নিরাপদ ও শন্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন।

Saturday, May 7, 2016

আমি বেঁচে থাকতে এদেশকে নিয়ে কাউকে খেলতে দেবো নাঃ শেখ হাসিনা

আমি বেঁচে থাকতে এদেশকে নিয়ে কাউকে খেলতে দেবো না
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এদেশে কোন জঙ্গি সন্ত্রাসের স্থান নেই। এদেশের মাটি ব্যবহার করে কাউকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘অনেকে জঙ্গি সন্ত্রাসের ধোয়া তুলে এদেশকে নিয়ে খেলার চেষ্টা করবে। কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে এদেশকে নিয়ে কাউকে খেলতে দেবো না।’ প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে ১০ম সংসদের ১০ম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে এদেশ জঙ্গি সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ছিল। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রই হচ্ছে বিএনপির রাজনীতির মূলমন্ত্র। খবর বাসস’র।

ঘুষ-দুর্নীতিতে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার দুই পুত্র চ্যাম্পিয়ন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল এবং মানুষকে শোষণ করাই ছিল বিএনপি আমলের চিত্র।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিল তখন তিনি কালো টাকা সাদা করেছেন। রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে তাদের পরিবার শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছে। বাংলাদেশ ওই সময় বিশ্বসভায় দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ছিল। এটাই ছিল বাংলাদেশের পরিচয়। আমরা ক্ষমতায় আসার পর সেই পরিচয় থেকে বেরিয়ে এসে আজকের বাংলাদেশ হচ্ছে উন্নয়নের রোল মডেল। বিএনপি নেত্রীর দুই ছেলেই দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। তাদের মানি লন্ডারিং সিঙ্গাপুরের আদালতে প্রমাণিত। এফবিআই-এর লোক এসে এখানে সাক্ষী দিয়ে গেছেন। বেগম খালেদা জিয়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে টাকা এনে এতিমের টাকা লুটপাট করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এক তার বার্তায় বিএনপি নেত্রীর বড় ছেলে সিমেন্সসহ বিভিন্ন কোম্পানি থেকে ঘুষ নিয়েছিল তার উল্লেখ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে একটি মামলা হয়েছে। সেখানে সিমেন্স কোম্পানি থেকে যে ঘুষ নিয়েছে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টে প্রমাণ হয়েছে এবং বিভিন্ন কোম্পানি থেকে তার ছেলে কত ডলার ঘুষ নিয়েছে এটাও উল্লেখ রয়েছে। এই টাকা সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে বিএনপি নেত্রীর ছেলের বন্ধুর নামে রাখা হয়েছে এবং সেখানে সে ধরা পড়েছে ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করতে গিয়ে। এমনকি একটি হত্যা মামলা ঘুষ নিয়েছিল তার ছেলে। এটি তাদের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী স্বীকার করেছে। এসব দুর্নীতির মাধ্যমে যাদের সম্পদ ছিল ছেড়া গেঞ্জি আর ভাঙ্গা সুটকেস তারা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা নিজেরা মানি লন্ডারিং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তারা এতো টাকা ঘুষ খেয়েছে যে আমেরিকার এফবিআই’র অফিসারকে পর্যন্ত টাকা দিয়ে কিনে ফেলেছে। এফবিআই’র অফিসারকে কিনতে গিয়ে বিএনপির এক নেতা আমেরিকাতে আটক হয়েছে। সেখানে তার বিচার হয়েছে। ওই বিচার কার্যক্রমে বিএনপি নেত্রীর উপদেষ্টা শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তারা সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি ওঠে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী জয় সম্পর্কে সম্প্রতি একটি মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। জয় এ বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করেছে। বিএনপি নেত্রীকে আমি সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এবং শেখ রেহানা আমাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়েছি। চোর-চোট্টা বানাইনি। ২১ আগস্ট আমাকে হত্যায় ব্যর্থ হয়ে এখন আমার ছেলেকে হত্যার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
তিনি বলেন, রাজনীতি জনগণের কল্যাণে এবং জনগণের জন্য। দেশের মানুষের কল্যাণে ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৮ সালের পর ক্ষমতায় এসে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। রিজার্ভ ২৯ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের উপরে অর্জিত হয়েছে। দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬১-এ নেমে এসেছে। জনগণের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৪৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমা থেকে উঠে এসে নিম্ন মধ্য আয়ে পৌঁছেছে। ৭ বছরে ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৭০৮ জনের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। রফতানি আয় বেড়ে ৩২ দশমিক ২ ডলারে উন্নীত হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এতে মা ও শিশু মৃত্যু হার কমেছে। গণমুখী স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে শিক্ষার হার ৭১ ভাগে উন্নীত হয়েছে। মানুষের দোরগোড়ায় শিক্ষা পৌঁছে দিতে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হচ্ছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত মেধাবৃত্তি ও উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমাতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলা এবং কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। 
শেখ হাসিনা বলেন, ১০৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে ১৪ হাজার ৭শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। দেশের ৭৬ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।