ধ্বংসের পথ ছাড়ুন, সঠিক পথে কিভাবে আনতে হয় আমরাও জানি ॥ শেখ হাসিনা
ছাত্রলীগের বিশাল গণসংবর্ধনায় ভাষণ
বিশাল ছাত্র-সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, এখনও সময় আছে ধ্বংসাত্মক পথ পরিহার করে গণতন্ত্রের পথে আসুন। সবকিছু সহ্য করছি বলে মনে করবেন না এটা আমাদের দুর্বলতা। এটা আমাদের দুর্বলতা নয়। যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছে, বোমাবাজি-অগ্নিসংযোগ করে জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে এসব নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীকে কীভাবে ‘সঠিক পথে’ আনতে হয় তা আমাদের জানা আছে। সেটা আমরা করতে চাই না। আমরা চাই তারা সঠিক পথে চলুক।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপে আর দানব দেখতে চায় না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিছু দিতে পারেনি, দিয়েছে শুধু অপশাসন। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে গণতন্ত্র চলছে, বাংলাদেশেও সেভাবে চলবে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় সঠিক সময়ে নির্বাচন হবে।
এইচএসসি পরীক্ষার মধ্যে হরতাল আহ্বানের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হরতালের নামে আপনারা গাড়ি পোড়াবেন, মানুষ মারবেন- এসব ধ্বংসাত্মক কাজ পরিহার করুন। গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসুন। আমরা যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি তখন বিরোধী দল হত্যা, সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, কী কারণে হরতাল? হরতালের নামে যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ঘুমন্ত চালককে হত্যা করেছে। একজন মুসলমান হয়ে কীভাবে আরেক মুসলমানকে আগুন দিয়ে হত্যা করতে পারে? হরতালের নামে ৫ জনের জীবন কেড়ে নেয়া হলো কিসের জন্য?
সুশৃঙ্খল-দৃষ্টিনন্দন দেশের লাখো ভবিষ্যত প্রজন্ম ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রাণঢালা সংবর্ধনার জবাবে বঙ্গবন্ধুর এই কন্যা আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, সবকিছু হারিয়ে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে আমি আমার বাবা-মা, ভাই ও আত্মীয়স্বজনদের খুঁজে পেয়েছি। আমার আর কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমার বাবা-মাসহ সবাই জীবন দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের জনগণের যে ভালবাসা ও সমর্থন আমি পেয়েছি তা কখনও ভোলার নয়।
দেশের জনগণের কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন হলে বাবার মতোই নিজের জীবন দিতে প্রস্তুত। দেশের জনগণের কল্যাণেই আমি আমার জীবনকে উৎসর্গ করেছি। একত্রিশ বছর আগে সবাইকে হারিয়ে দেশে ফিরেছিলাম বলেই বঙ্গবন্ধু হত্যা বিচার করেছি, খুনীদের বিরুদ্ধে রায় কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করেছি, ইনশাল্লাহ এটাও সম্পন্ন করব। আধ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দেয়া প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে দেশের সর্বশেষ রাজনীতি, ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ছাড়া আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য একটি সময়সীমাও জানিয়ে দেন দেশবাসীকে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে বিশাল চত্বরে শেখ হাসিনার ৩১তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস এবং তাঁর সময়োচিত সিদ্ধান্ত, বিচক্ষণ ও সুদূরপ্রসারী রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক আদালতে আইনী লড়াই করে গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠায় সমুদ্র বাংলা অর্জনে দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রধানমন্ত্রীকে এই জমকালো ছাত্র-সংবর্ধনা প্রদান করে।
আর এই সংবর্ধনায় সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আগত সংগঠনটির লাখো নেতাকর্মীর উপস্থিতি এক ভিন্ন আবহের সৃষ্টি করে। ভিন্ন আবহে ও সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয় ছাত্রলীগ। এছাড়া এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এই ছাত্র সংগঠনটির নেতৃত্ব দেয়া প্রবীণ-নবীন নেতাকর্মীদের রীতিমতো মিলনমেলায় পরিণত হয়। হরতালের বাধা উপেক্ষা করেই হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যান্ডের তালে তালে, নেচে-গেয়ে এবং বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে উপস্থিত অনুষ্ঠান শুরুর আগেই বিশাল এই সম্মেলনস্থল কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানাতে ছাত্রলীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরের বিশাল প্রাঙ্গণ এবং আশপাশের দীর্ঘ সড়কপথ সাজানো হয় বর্ণাঢ্য সাজে। সমুদ্রের গর্জনের আদলে আকাশি রঙের সাম্পান নৌকার আদলে সুবিশাল মঞ্চ, মাঠ ও মঞ্চের চতুর্দিকে বড় বড় পাল তোলা নৌকা, সাম্পান, ট্রলার এবং জাতীয় পতাকাসহ বাহারি রঙের পতাকা দিয়ে অপরূপ সাজে সজ্জিত করা হয় পুরো এলাকা। বিকেল সাড়ে তিনটায় সংবর্ধিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত হওয়ার পর জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় দৃষ্টিনন্দন এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশ করা হয়। এরপরই ‘শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির মোরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, আমরা ছাত্রলীগ...’ দলীয় সঙ্গীত এবং শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা গানের সুরে এবং দেশাত্মবোধক গানের তালে তালে মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। নৃত্যের তালে তালেই প্রধানমন্ত্রীকে পুষ্পবৃষ্টি ছড়িয়ে এবং জাতীয় পতাকা দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। এরপর ঐতিহাসিক সমুদ্র বিজয় এবং ‘আলোর পথের সারথী’ শীর্ষক শেখ হাসিনার সুদীর্ঘ ৩১ বছরের লড়াই-সংগ্রাম ও অর্জনের একটি প্রামাণ্য ভিডিওচিত্র পুরো প্রাঙ্গণে লাগানো বিশাল বিশাল ডিজিটাল ব্যানার ও এলসিডির মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম, সহ-অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ, ফুটবলের কৃতী স্টাইকার জাহিদ হাসান এমিলি ও এভারেস্ট বিজয়ী মূসা ইব্রাহীম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মানপত্র পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি। এরপর মানপত্রসহ ক্রেস ও উত্তরীয় তুলে দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগ। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও এভারেস্ট বিজয়ী মূসা ইব্রাহীমের বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাপনী ভাষণের মাধ্যমে শেষ হয় এই মনোলভা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী আরও যা বলেন ॥ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশকে দিয়েছে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ আর হত্যা-নির্যাতন। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছরে দিয়েছে অপশাসন। তিনি বলেন, এই আমলটি ছিল অপশাসনের আমল। শিক্ষক, ছাত্র, ব্যবসায়ী, রাজনীতিকসহ এমন কোন শ্রেণী-পেশার মানুষ নেই যে ওই দুই বছরে নির্যাতনের শিকার হননি। বাংলাদেশের মানুষ আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপে দানবকে দেখতে চায় না।
বিরোধী দলের হরতালের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি তখন বিরোধী দল মানুষ পুড়িয়ে মারছে। আমরা শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে নতুন বছরের শুরুর দিনে নতুন বই তুলে দিচ্ছি। ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবছর ভাল ফল করছে। কিন্তু এবারের এইচএসসি পরীক্ষার মধ্যে বারবার বিরোধী দল হরতাল দেয়ায় তাদের পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হচ্ছে। এভাবে পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা করা হলে তাদের পড়াশোনার মনোযোগ উঠে যাবে। ক্ষতি হচ্ছে তাদের শিক্ষাজীবনে। কিন্তু কেন এই হরতাল? হরতাল দেয়ার মতো তো কোন কারণ নেই। তবে কেন তারা হরতালের নামে মানুষ হত্যা করছে, গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করছে?
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরের দুর্নীতি, দুঃশাসন ও বিরোধী দল দমনের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় থাকতে তারা কত মানুষ হত্যা করেছে, অত্যাচার-নির্যাতন ও মা-বোনদের ইজ্জত কেড়ে নিয়েছে তা কী বিরোধীদলীয় নেত্রী ভুলে গেছেন? তিনি (খালেদা জিয়া) ভুললেও দেশের মানুষ কোনদিন ভুলবে না। ওই সময় একদিনে দেশের পাঁচ শ’ স্থানে বোমা ফাটিয়েছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২২টি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টারসহ অনেককে হত্যা করেছে। এসব কী বিরোধী দল ভুলে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে কোন প্রতিশোধ নেইনি। বরং আমাদের সকল সাংগঠনিক শক্তি নিয়োগ করেছি দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে, তাদের কল্যাণে। তিনি বলেন, শিক্ষা, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক, অর্থনীতি সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিরোধী দল ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নিয়েছে। আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালাচ্ছে।
আগামী নির্বাচনের দিন-ক্ষণ জানালেন প্রধানমন্ত্রী ॥ ছাত্রলীগের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়সীমা অবহিত করলেন দেশবাসীকে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে বর্তমান সরকারের ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবে, তখন নির্বাচন দিতে হবে। সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দিতে হবে। ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারির মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। সেভাবেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, দেশের কষ্টার্জিত গণতন্ত্রকে ধারাবাহিকভাবে চলতে দিতে হবে। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে গণতন্ত্র চলছে, বাংলাদেশেও সেভাবে চলবে। আমরা আশা করি বিরোধী দল ধ্বংসাত্মক ও অগণতান্ত্রিক পথ পরিহার করে গণতন্ত্রের পথে আসবে।
ছাত্রলীগের গৌরবগাথা ইতিহাসের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের চেয়েও এক বছরের বড় ছাত্রলীগ। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতাসহ বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগ রেখেছে অগ্রণী ভূমিকা, করেছে আত্মত্যাগ। বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে ছাত্রলীগের নাম জড়িত।
ঐতিহাসিক সমুদ্র বিজয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সঠিক সময়ে পদক্ষেপ না নিলে সমুদ্রসীমায় আমাদের সকল অধিকার চিরদিনের জন্য হারাতাম। ’৭৫-এর পর কোন সরকার এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি, শুধু ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি, দুঃশাসন, সন্ত্রাস ও নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনেই ব্যস্ত থেকেছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের সবুজ বাংলা দিয়ে গেছেন। আমরা দেশবাসীকে দিয়েছি সুনীল বাংলা। এই সবুজ ও সুনীল বাংলা মিলিয়ে আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, বাঙালীর আজীবনের লালিত স্বপ্ন স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। আর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কাজ সম্পন্ন করতে ৩১ বছর ধরেই নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা।
এভারেস্ট বিজয়ী মূসা ইব্রাহীম বলেন, বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন স্বাধীনতা, আর শেখ হাসিনা দিলেন সমুদ্রে ঐতিহাসিক বিজয়। ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বলীয়ান হতে হবে, মন ও হৃদয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পতাকাকে লালন করে যেতে হবে। নিজেকে, মা, মাটি ও দেশকে ভালবাসতে শিখতে হবে।
সরকার পরিবর্তন হবে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায়
ReplyDeleteপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না, এটি ঠিক নয়। সরকার পরিবর্তন হবে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায়। যারা সংসদে আছেন, দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে তাদের সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।
আর কেউ যাতে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সে জন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরও বলেছেন, মানুষকে সেই খেলোয়াড়দের সম্পর্কেও সজাগ থাকতে হবে, যারা অবৈধ অগণতান্ত্রিক সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলতে চায় আর নিজেদের ভাগ্য গড়ে তুলতে চায়। গত ১৬ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলে দলীয় স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। দেশের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকার আকাক্সক্ষা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময় অনুষ্ঠিত পাঁচ হাজারের ওপর নির্বাচনের সবই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপে হয়েছে। একটি নির্বাচন নিয়েও কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের জনগণের ভোট পাওয়ার মতা নেই, রাজনৈতিক দল গড়েও যারা ব্যর্থ হন কিন্তু মতায় যাওয়ার খায়েশ আছে, তারাই সবসময় অলিগলি খোঁজেন কীভাবে অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পথে মতায় যাওয়া যায়। এদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য, যখনই তারা কোনো স্বপ্ন দেখে তখনই তাদের ওপর আঘাত আসে। যারা চায়নি এদেশ এগিয়ে যাক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত হোক, তারাই গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার নিয়ে বারবার ষড়যন্ত্র করেছে।
তিনি বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আমরা দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে এনেছি। সংবিধান সংশোধন করে জনগণের মতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি, জনগণকে প্রজাতন্ত্রের মালিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি। মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে আমরা ছিনিমিনি খেলতে দেব না। বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিয়োগান্তুক ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, একদিনে মা-বাবামহ পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি। তখন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেব। স্বয়ং বাবার কাছ থেকে একটি জিনিস শিখেছি, তা হলো মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা। সে ল্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। চারদলীয় জোট সরকারের অত্যাচার-নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকে যে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে তা একাত্তরকেও হার মানিয়েছে। আমরা চাই না, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যে আর সে ধরনের দুর্দশা আর অমানিশার অন্ধকার নেমে আসুক। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে আমি গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হইনি বলে মতায় আসতে দেওয়া হয়নি। সে সময় গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হয়েছিলেন বিএনপি নেত্রী। আমি জাতির জনকের কন্যা। আমার বাবা এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের মানুষের এতটুকু তি হোক, সেটি আমি চাই না। মানুষের কল্যাণে নিজের জীবন দিতেও পরোয়া করি না। আমার বাবা যে দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, সে দেশের মানুষের জন্য কথা বলব, তার জন্য সাহসের প্রয়োজন হবে কেন? পঁচাত্তর-পরবর্তী বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বৈরী পরিবেশেই আমি রাজনীতিতে এসেছি। একমাত্র ওপরে আল্লাহ এবং নিচে দেশের জনগণের ওপর আস্থা-বিশ্বাস নিয়েই রাজনীতি করেছি। জনগণের ওপর আস্থা-বিশ্বাস আছে বলেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শেষ করতে পেরেছি। এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে। এ বিচারও আমরা ইনশাল্লাহ শেষ করতে পারব। বিডিআর বিদ্রোহসহ অন্য সব বিচারও শেষ করা হবে। পঁচাত্তরের খুনিচক্রসহ যুদ্ধাপরাধীদের রায় বিএনপি-জামাত জোট ও সাম্প্রদায়িক চক্রের সম্পৃক্ততা তুলে ধরে তিনি বলেন, একটু ল্য করে দেখবেন, খুনিদের কারা বাঁচাতে চায়? তাদের চরিত্র দেখলেই বুঝতে পারবেন, অবৈধ মতা দখল করে খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় আর মদদ দেওয়াটাই তাদের কাজ। জাতির জনকের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এদেশ এখন সবক্ষেত্রেই বিশ্বে মডেল। ঈদে প্রতিটি মানুষের ঘরে খাবার নিশ্চিত করতে সরকার এক কোটি মানুষকে বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল দিয়েছে বলে জানান তিনি। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, অধ্যাপক ড. দুর্গাদাস ভট্টাচার্য, সভাপতিম-লীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম, একেএম রহমতউল্লাহ এমপি, যুক্তরাষ্ট্র শাখা সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক নূহ-উল-আলম লেনিন ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
পদ্মা সেতু হবেই : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ReplyDeleteনির্বাচনী প্রতিশ্রুতিরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন , বিদ্যুতের দেওয়া ওয়াদা ইনশাল্লাহ পূরণ করা হবে, সংসদে শেখ হাসিনা
বৃহস্পতিবার | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ২৯ ভাদ্র ১৪১৯
যেভাবেই হোক পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে বলে আবারও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থের সংস্থান না হলে রেল বাদ দিয়ে শুধু গাড়ি পারাপারের ব্যবস্থা রেখে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের কারণে জটিলতায় পড়া পদ্মা প্রকল্প নিয়ে গতকাল সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ কথা জানান। বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বাতিল করলেও প্রকল্পের কাজ থেমে নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কাজ একেবারে থেমে নেই। ভূমি অধিগ্রহণ হচ্ছে, নদী শাসন ও ড্রেজিংয়ের কাজও চলছে। বিশ্বব্যাংকসহ কয়েকটি সংস্থার অর্থায়নে ২৯১ কোটি ডলার ব্যয়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল, যাতে রেল ও গাড়ি দুটিই পারাপারের ব্যবস্থা থাকার কথা।
শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটা অল্টারনেটিভ প্ল্যান আমাদের কাছে আছে। যাতে শুধু গাড়ি চলবে। এতে খরচ অনেক কম হবে। যদি বিকল্প অর্থের সংস্থান না হয়, তবে আমরা অল্টারনেটিভটি বেছে নেব। গত ২৯ জুন বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বাতিলের পর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরির ঘোষণা দেয় সরকার। তবে বিশ্বব্যাংককে ফেরাতেও বিভিন্নমুখী তৎপরতা চলছে। এর বাইরে পদ্মা সেতু নির্মাণে মালয়েশিয়ার একটি প্রস্তাবও সরকারের কাছে রয়েছে ।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর সব দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ জনসমক্ষে প্রকাশ ও প্রচার করার জন্য গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ সংবিধান বিশেষজ্ঞকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, দেশে কিছু নেতা আছেন, যারা বসন্তের কোকিল। তারা কখন যে কুহুকুহু করেন আর চুপ করে বসে থাকেন সেটাই বোঝা মুশকিল। হঠাৎ করে তিনি এতটা উত্তেজিত ও সোচ্চার হলেন কেন, সেটাই প্রশ্ন।
এ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আরও বলেন, দুর্নীতির এসব তথ্য গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েই প্রকাশ করা উচিত ছিল। কেননা তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন। তখন কেন এগুলো প্রকাশ করা হয়নি, তা তার জানা নেই। আবার বেসরকারি টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমও কেন ও কার স্বার্থে এগুলো প্রচার করে না, সেটাও প্রশ্ন। তবে ড. কামাল নিজেই এগুলো প্রকাশের কথা জানিয়েছেন বলে তাকে ধন্যবাদ।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলেই এসব দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
তিনি বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে মূল সেতুর টেন্ডার প্রক্রিয়ায় তা প্রমাণ হয়নি। নির্মাণ তদারকি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। বিশ্বব্যাংক তদন্ত করেও এতে কোনো দুর্নীতি পায়নি। যেখানে খরচ করা টাকায় কোনো দুর্নীতি হলো না, সেখানে যে টাকা ছাড়ই হয়নি, সেই টাকায় দুর্নীতি কীভাবে হয়?
গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা দেশের জনগণের সার্বিক উন্নতি ও কল্যাণে তার সরকারের সাড়ে তিন বছরের সাফল্যের বিবরণ তুলে ধরেন। নাছিমুল আলম চৌধুরী, মোল্যা জালাল উদ্দিন, তাজুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম এবং একেএম মাইদুল ইসলামের পৃথক প্রশ্নের জবাবে দারিদ্র্য বিমোচন, কৃষি উন্নয়ন ও কর্মসংসংস্থান বৃদ্ধিতে সরকারি পদক্ষেপ তুলে ধরেন তিনি।
বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিরও বেশি বিদ্যুৎ সরকার উৎপাদন করেছে। ওয়াদা যখন দেওয়া হয়েছে, তখন ইনশাল্লাহ বাকি ওয়াদাও পূরণ করা হবে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সড়ক, রেল ও নৌ যোগাযোগ উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। শাহরিয়ার আলমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশ যখনই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়, তখনই আওয়ামী লীগের ওপর দায়িত্ব পড়ে ধ্বংসাবস্থা থেকে দেশকে উদ্ধারের।